ধুর! জুতোটা আবার কই রাখলাম? বেলটা বেজেই যাচ্ছে। ডাক্তার এসেছে বোধহয়।জুতো পরতে পরতে ন্যাশ ভাবলো । জুতো ওর একদম পছন্দ না। ওর মনে হয় মাটিতে পা ছোঁয়ালে মাটি থেকে এক ধরনের তরঙ্গ শরীরে প্রবেশ করে।কিন্তু বাইরে খালি পায়ে হাঁটা নিষেধ।তাই ঘরে বেশিরভাগ সময় ও খালি পায়ে থাকে।কিন্তু বাইরের কারো সামনে খালি পায়ে গেলে সে খবর প্রধানের লোকজনের কাছে চলে যাবে এবং শাস্তি পেতে হবে।কানুনের বইয়ের ধারা পরিপন্থি কোন কাজ তারা করতে দেয় না।অবশ্য ন্যাশের মাঝে মাঝে যখন খুব মন খারাপ হয় তখন জুতো খুলে হাতে নিয়ে ওর প্রিয় সমুদ্র পাড়ের রাস্তাটাতে হেঁটে বেড়ায়। যদিও মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় পায়।চারদিকে প্রধানের লোকজনের শকুনে দৃষ্টি, তবু এতো ভালো লাগে।মনে হয় মাটি এক পরম মায়ার বাঁধনে ওকে বেঁধে ফেলছে। বুবুকে যখন জড়িয়ে ধরে, তখনও ঠিক একই অনুভুতি হয়।
একটু নীচু হয়ে দেখে এক পাটি জুতো চেয়ারের নীচে।ওটা পায়ে ঢুকাতে গিয়ে নজরে পড়লো আর এক পাটি দরজার পেছনে। জুতো পরে কোন মতে গিয়ে দরজা খুলে ডাক্তার কে ঘরে ঢুকালো।ডাক্তার বেশ বিরক্ত হবার কথা অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।কিন্তু তিনি বেশ অমায়িক ভাবে হেসে দিয়ে বললেন, “ স্যালুটন” (হাই) ন্যাশ মুখের ভেতর রেখে কিছু বলছে এমন একটা শব্দ করে মাথা নাড়লো।মনে মনে প্রমাদ গুনলো।এই ঘরে বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা শুনলে বুবু রেগে যায়।ও নিজেও খুব একটা বাংলা পারেনা।কাজ চালিয়ে নেবার মত কিছু শব্দ কেবল জানে। তাও আবার বাইরে বাংলা ব্যবহার করা যায় না। বাবা মা তো তাও পারতো না। বুবুই ওকে শিখিয়েছেন।প্রধানের রাজত্বে সবাইকে একই ভাষায় কথা বলতে হয়।এই ভাষার নাম এসপ্যার্যানটৌ ।কিন্তু বুবু কোন ভাবেই বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষায় কথা বলবে না।উনি ২১ টা ভাষা জানেন।এসপ্যার্যানটৌও জানে কিন্তু উনি উনার মাতৃভাষা বাংলা ছাড়া আর অন্য কোন ভাষায় কারো সাথে কথা বলে্ন না। উনার বয়স এখন ১২৩ বছর।খুব একটা চলাফেরা করতে পারেন না। কিন্তু দৃঢ় মনোবলের অধিকারি।উনার যখন ২১ বছর বয়স তখন ধর্মের কারণে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।সেই যুদ্ধ যখন তুমুল আকার ধারণ করে তখন গ্রহান্তর থেকে প্রধান ও তার লোকজন এসে বল্ প্রয়োগে ক্ষমতা নিয়ে নেয়।তারপর সব ধরনের ধর্ম পালন নিষিদ্ধ করে।পৃথিবীর তখনকার লোকসংখ্যাকে সমান ভাগে ভাগ করে পরিবার,ধর্ম,বর্ণ,জাতি এইসব বিবেচনা না করে ওদের নিজস্ব নিয়মে লোকজনকে এক একটি এলাকায় বসতি স্থাপন করে দেয়।সেখানে সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে।প্রথম দিকে কিছু মানুষ বিরোধিতা করলেও একসময় সবাই সব কিছু মেনে নেয়।ন্যাশের বাবা মাকে ওএকদিন চলে যায় অন্য গ্রহে।এখাকার নিয়ম হল কারো বয়স ৬০ বছর হলে তাকে অন্য একটি গ্রহে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখানে দেশ বা মানচিত্র বলে কিছু নেই।সবাই একই খাবার খায়,একই গান শোনে,একই ড্রেস পরে।কোন বৈচিত্র নেই।সব কিছু একঘেয়েমিপূর্ণ। পৃথিবীতে এখন কোন পরিবার বা রক্তের সম্পরকের কেউ নেই একমাত্র ন্যাশ আর ওর বুবু ছাড়া।থাকলেও তারা নিজেরাও তা জানে না।বুবুকে বশে আনার অনেক চেষ্টা করে অবশেষে প্রধানের লোকজন হাল ছেড়ে দিয়েছে।
বুবুর বয়স যখন ৪৩ বছর ছিল, তখন ১৪ বছর ৭ মাস উনাকে একটা দ্বীপে একদম একা থাকতে হয়েছে।নির্বাসনে।তবু কেউ উনাকে প্রধানের কথামত চালাতে পারেননি।উনি নামাজ পড়েন, নানা ধরনের পোষাক পরেন।নিজের পছন্দমত খাবার খান।বাবা-মার মত তিনি পৃথিবীও ছেড়ে যাননি। উনার বয়স যখন ১০০ হল তখন প্রধান একদিন উনার সাথে দেখা করলেন।তাদের মাঝে কি কথা হয়েছে কেউ জানে না কিন্তু তারপর থেকে বুবু নিজের ইচ্ছেমত চলতে পারেন,প্রধানের লোকজন আর ঝামেলা করে না।।এখানে ১০ বছর বয়স থেকে সন্তানদের প্রধানের লোকদের কাছে দিয়ে দিতে হয় ।কিন্তু বুবু ওকে যেতে দেয়নি।ন্যাশের বাবা মায়ের বয়স যখন ৫৩ তখন ওর জন্ম।বাবা মা কে মাত্র ৭ বছর ও কাছে পেয়েছে। এখনও তাই ও বুবুর সাথে থাকে।গত রাত থেকে বুবু বেশ দূর্বল। ডাক্তারকে খবর দেয়া হয়েছে।কিন্ত এই ডাক্তারকে তো বুবু কিছুই বলবে না যদি সে বাংলায় কথা না বলে।বুবুর রুমে ঢুকে ডাক্তার পরিষ্কার বাংলায় বলল, “সুপ্রভাত” আর ঠিক তখনই ন্যাশ বুঝতে পারলো এটা একটা রোবট ডাক্তার।আর ওকে শুধু তৈরি করা হয়েছে মানুষকে মেরে ফেলার জন্য।সে ডাক্তার হিসেবে ঘরে ঢুকে তারপর একটা ইনজেকসন দিয়ে রোগী মেরে ফেলে।এদের বোঝার একটাই উপায় ওরা ঘরে ঢুকে রোগীর মাতৃভাষায় কথা বলে।পৃথিবীতে একমাত্র ওরাই ভাষা অনুবাদক ব্যবহারের অনুমতি পায়। ওদের শরীরে ভাষা অনুবাদক লাগানো থাকে।ন্যাশ জানে তার কিছুই করার নেই তবুও রোবটটাকে ধাক্কা দিয়ে হাত থেকে ইনজেকসন ফেলার বৃথা চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভেতর পৃথিবী থেকে বাংলা জানা শেষ মানুষটিও মারা যায়।বুবু ছিল বলেই ন্যাশ এতদিন বাংলা বলার অনুমতি পেয়েছিলো প্রধানের কাছ থেকে।আজ থেকে পৃথিবী তে আর কেউ বাংলা বলতে পারবে না।রোবটটা বুবুকে হত্যা করে মৃত দেহ নিয়ে চলে গেল।ক’দিন থেকেই শুনছিল ওরা বুবুকে মেরে ফেলবে।অবশেষে চলে এল সেই দিন।ন্যাশ অনেকক্ষন ভাবলেশহীন হয়ে বসে ছিল।তারপর জুতো খুলে ঘর থেকে বের হয়ে সমুদ্রের দিকে হাঁটতে থাকলো…পেছনে প্রধানের লোকদের সোরগল শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু তবুও ন্যাশ হাঁটতে থাকলো…আর চিৎকার করে ওর জানা বাংলা শব্দগু্লো বলতে লাগলো…
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
সুন্দর গল্প, সাইফাইয়ের চেয়ে ভীষণ আবেগী মনে হলো একটা ভাষার প্রতি টান সৃষ্টিতে। (হুম তাহলে রোবট জল্লাদ আসছে! মৃত্যুদন্ড সহসাই বিলীন হচ্ছে না হা হা হা।)
সুমন
কোন কিছুর শেষটা কেমন হতে পারে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসলে নির্ণয় করা যায় না। যা যায় তা হলো নিজের মনে সে ঘটনা সাজানো। আর এই সাজানোতে আপনি মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন। কিছু প্রশ্ন অবশ্য থেকে গেল প্রধানের সাথে বুবুর কি কথা হয়েছিল যে বুবু স্বাধিন ভাবেই তার কাজ-কর্ম করে গেলেন? এখানেই ছোটগল্পের গল্পকারের মজা, পাঠক নাকানি চুবানী খেতে থাকুক না হা হা হা। ভাল হয়েছে গল্প।
জিয়াউল হক
আপনার সাথে আমি সহমত সহমত সহমত সহমত সহমত এবং সহমত । এমন একটা পৃথিবীতে পুনর্বাসনের সুযোগ এলে বাড়ি ঘর আত্মীয় সবজন ছেড়ে সর্বপ্রথম আমি যাব । এই বয়সেই হাপিয়ে উঠেছি বড় । বুকিং দিলাম । অসাধারণ একটি লেখা
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
তারপর সব ধরনের ধর্ম পালন নিষিদ্ধ করে।পৃথিবীর তখনকার লোকসংখ্যাকে সমান ভাগে ভাগ করে পরিবার,ধর্ম,বর্ণ,জাতি এইসব বিবেচনা না করে ওদের নিজস্ব নিয়মে লোকজনকে এক একটি এলাকায় বসতি স্থাপন করে দেয়।সেখানে সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে।প্রথম দিকে কিছু মানুষ বিরোধিতা করলেও একসময় সবাই সব কিছু মেনে নেয়। ...................// অসাধারণ লাগল এই কল্পসাটা.....সেই দিক থেকে বলব ধর্ম বর্ণ জাতি না থাকলে পৃথিবীর মানুষ সত্যিই ভাল হতে পারত ....কল্পনায় অনুশাষনের বিষয়টা জুড়ে দিলে আরো বাল লাগত ...এমনিতে আমার অনেক ভাল লেগেছে......ধন্যবাদ মিলি আপনাকে.........
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।